‘চরকার গান’
ঘোর –
ঘোর্ রে ঘোর্ রে আমার সাধের চর্কা ঘোর।
ঐ স্বরাজ-রথের আগমনী শুনি চাকার শব্দে তোর॥
তোর ঘোরার শব্দে ভাই সদাই শুনতে যেন পাই,
ঐ খুল্ল স্বরাজ-সিংহদুয়ার, আর বিলম্ব নাই।
ঘু’র্ আস্ল ভারত-ভাগ্য-রবি, কাট্ল দুখের রাত্রি ঘোর॥
ঘর ঘর তুই ঘোর্ রে জোর ঘর্ঘর ঘর্ ঘূর্ণিতে তোর,
ঘুচুক ঘুমের ঘোর, তুই ঘোর্ ঘোর্ ঘোর্।
তোর ঘুর-চাকাতে বল-দর্পীর তোপ্ কামানের টুটুক জোর॥
তুই ভারত-বিধির দান এই কাঙাল দেশের প্রাণ,
আবার ঘরের লক্ষ্মী আস্বে ঘরে শুনে’ তোর ঐ গান।
আর লুট্তে না রবে সিন্ধু-ডাকাত বৎসরে পঁয়ষট্টি ক্রোড়॥
হিন্দু-মুসলিম দুই সোদর, তাদের মিলন-সূত্র-ডোর রে
রচ্লি চক্রে তোর, তুই ঘোর্ ঘোর্ ঘোর্ ঘোর্।
আবার তোর মহিমায় বুঝ্ল দু’ভাই মধুর কেমন মায়ের ক্রোড়!
ভারত বস্ত্রহীন যখন, কেঁদে ডাকল – নারায়ণ!
তুমি লজ্জা-হারী করলে এসে লজ্জা নিবারণ,
তাই দেশ-দ্রৌপদীর বস্ত্র হরতে পার্ল না দুঃশাসন-চোর॥
এই সুদর্শন চক্রে তোর
অত্যাচারীর টুট্ল জোর রে, ছুটল সব গুমোর
তুই ঘোর্ ঘোর্ ঘোর্॥
তুই জোর জুলুমের দশমগ্রহ, বিষ্ণু-চক্র ভীম কঠোর
হয়ে অন্ন বস্ত্রহীন আর ধর্মে কর্মে ক্ষীণ
দেশ ডুব্ছিল ঘোর পাপের ভারে যখন দিনকে দিন,
তখন আন্লে অন্ন পুণ্য-সুধা, খুল্লে স্বর্গ মুক্তি-দোর॥
শাস্তে জুলুম নাশতে জোর,
খদ্দর-বাস বর্ম তোর রে অস্ত্র সত্য-ডোর,
তুই ঘোর্ ঘোর্ ঘোর্।
মোরা ঘুমিয়েছিলাম, জেগে দেখি চল্ছে চরকা, রাত্রি ভোর॥
তুই সাত রাজারই ধন, দেশ-মা’র পরশ-রতন,
তোর স্পর্শে মেলে স্বর্গ অর্থ কাম্য মোক্ষ মন।
তুই মায়ের আশিস্, মাথার মানিক, চোখ ছেপে বয় অশ্রু-লোর॥