নাটক : ‘মধুমালা’
এই কাঞ্চননগরের বাদ্শা নাম দণ্ডধর,
একচ্ছত্র রাজ পাট যার লাখ লাখ নফর।
রাজার বাড়িতে হলুদ বাটে হীরার শিল নোড়াতে –
সোনারূপায় ধরছে ছাতা শুকায় লইয়া ছাতে।
এত থেকেও সুখ নাই রে রাজার একি হৈল,
সাত-সলিতা ঘিয়ের বাতি নাই যেন রে তৈল।
রাজ্যসুদ্ধা কাঁদে যত ছাইল্যা মাইয়্যা বুড়া,
রাজার এ ধন কে খাইব, রাজা যে আঁটকুড়া।
ভোর উইঠ্যা দেকে যদি কেউ আঁটকুড়ার মুখ,
সেদিন অন্ন জোটে না তার, তার মুখে দেয় থুক্।
তাই না শুইনা রাজা দিলেন মন্দিরেতে খিল্
আঁটকুড়া মুখ দেখাইবেন না আর তেনায় এক তিল।
পানের বাটায় পান রইল আপনায় ঠাঁয় পইর্যা,
সোনার গাড়ুর তীর্থের জল কাঁদে ঝইর্যা ঝইর্যা।
তাই না দেইখ্যা দেবতার মনে হইল কিঞ্চিৎ দয়া
বলেন রাজা ওঠ ওঠ – পুত্র হইব পয়া।
বলেন কি বলেন, তপ্ত সোনার কুমার তোমার ভরবে রাজপুরী,
কিন্তু রাজা তাকে পরী করবে বুঝি চুরি।
আঁধার ঘরে রেখো তারে বারোটি বৎসর,
পাতালপুরীর মধ্যে রাজা বানাইয়া এক ঘর।
চাঁদ সূরুয দেখে না যেন তোমার চাঁদের মুখ,
বারো বৎসর থাকলে সেথায় কাট্বে সকল দুখ।
বারো বৎসর আগে রাজা না খুলিও দ্বার,
খুলিলে উদাসী হয়ে ঘুরিবে সংসার।
মদনকুমার নাম রাখিও এইনা কবচ লও,
(এই) কবচ রানীর গলায় বাইন্দ্যা পুত্রের আশায় রও।
কইব কি সে-দুঃখের কথা, সোনার ছাওয়াল লইয়া,
পাতালপুরীর মাঝে রাখল পাগল হইয়া।
বারো বছর পূর্ণ হইবার তিনদিন যবে বাকি,
রাজপুত্র ত কাইন্দ্যা কাইন্দ্যা ফুলাইল তার আঁখি।
বলে, মাগো চন্দ্র সূয জন্মে দেখলাম নাকো,
একটিবার মা দেখবার দাও গো মোর মিনতি রাখ।
কাইন্দ্যা কাইন্দ্যা রাজপুত্রের যায় বুঝি দম ছাইড়্যা,
মনের দুয়ার খুইল্যা দিল হায় রে মায়ার হাইর্যা।
সেই নামের রাজপুত্র একদিন শিকারেতে যায়,
সৈন্য লস্কর লইয়া রে ভাই কাঁদাইয়া বাপ মায়।
লোকের মুখে শুনলাম হইল শিকারে এক জ্বালা
স্বপ্নেতে রাজকুমার দেখল কন্যা মধুমালা।